AD

ওডেস্ক আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চলেছে… আপনি কেন অপেক্ষা করছেন?

প্রাথমিক কথা

আমি মনে করি ওডেস্ক এমন একটি ফ্রিল্যান্সিং সাইট যেখানে সব ধরণের কাজ রয়েছে। এমন কি আপনি যদি ভাবেন বা মনে করেন আপনি মুভি দেখা ছাড়া আর কিছুই করেন না, আমি বলবো, ওডেস্কে মুভি দেখার জন্যও জব রয়েছে। ঘরে বসে মুভি দেখবেন আর এই মুভি দেখা শেষ হলে জাস্ট ২০০/৩০০ শব্দের একটা রিভিউ লিখে দেবেন। এজন্যও আপনি পেমেন্ট পাবেন।

ওডেস্ক কী?

ওডেস্ক একটি ওয়েবসাইট। যেখানে বিভিন্ন কাজের বিজ্ঞপ্তি দেয়া থাকে এবং আপনি আপনার পছন্দসই কাজ করতে পারেন তাদেরকে নির্দিষ্ট একটা চার্জ দিয়ে। অর্থাৎ ওডেস্ক হলো একটা মিডিয়া। আপনার এবং কাজদাতার মধ্যে পরিচয়, পারস্পরিক লেন-দেন করে দেয়ার একটা মিডিয়া সাইট হলো ওডেস্ক। এরকম সাইট আরও অনেক রয়েছে। তবে ওডেস্ক-ই হলো সর্বেসর্বা বা সর্বশ্রেষ্ঠ।

আমি ওডেস্কে কাজ করার উপযোগী?

হ্যাঁ, আশা করি এটা এতক্ষণে বুঝে গেছেন প্রাথমিক কথাটুকু পড়েই। এমন কোনো কাজ নেই যেটা ওডেস্কে নেই। সব ধরণের কাজ রয়েছে। হয়তো আপনি সারাদিন ফেসবুক নিয়ে পড়ে থাকেন। আপনি হয়তো জানেনও না এই পড়ে থাকাটাই মূল্যবান করে তুলতে পারেন আপনি।

কীভাবে ওডেস্ক থেকে কাজ পাবো?

প্রথমে আপনাকে ওডেস্কে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন করতে কোনো ফি প্রদান করতে হয় না অর্থাৎ সম্পূর্ণ ফ্রি। সুতরাং এখন-ই একটি একাউন্ট ওপেন করতে পারেন। একাউন্ট ওপেন করার পর আপনার একটি প্রোফাইল তৈরি করতে হবে চমৎকারভাবে। কারণ প্রাথমিকভাবে এই প্রোফাইল দেখেই কাজদাতারা আপনাকে কাজ দেবেন। প্রোফাইল ১০০% হলে আপনি কাজের জন্য আবেদন করতে পারেন যেটাকে ওডেস্কের ভাষায় বলা হয়- বিড করা।

বিড মানে কি?

ব্যাপারটা সহজ করে বলি- কাজদাতা তার কাজটির জন্য ১০০ ডলার বরাদ্দ করেছে। এর বেশি সে দেবে না। এই টাকার মধ্যেই সে কাজটি করাতে চাচ্ছে। আপনি কাজটি ১০০ ডলারেই করবেন নাকি আরও কমে করবেন? সাধারণত সবাই এর কমেই করতে চায়। এই চাওয়াটা কাজদাতাকে জানিয়ে দেয়াটাই হচ্ছে বিড করা। বিড করার সময় একটি কভার লেটার লিখতে হয়। যেখানে আপনি উল্লেখ করবেন সুন্দর করে- কেন কাজদাতা আপনাকে কাজটি দেবেন?
এই ব্লগে খুব সুন্দর কভার লেটার-এর স্যাম্পল দিয়েছেন নাফিউর রহমান সজীব ভাই।
এছাড়াও ওনার লেখা কিভাবে ওডেস্ক-এর জবে বিড বা অ্যাপ্লাই করবেন? পড়ে দেখুন। বিড ব্যাপারটা আরও সহজ হয়ে যাবে।

রেডিনেস টেস্ট কী?

ওডেস্ক-এ কাজ করতে হলে কিছু নিয়ম-কানুন মানতে হয়। ওদের নিয়ম-কানুন ভালো করে পড়েছেন কিনা সেটা শিউর হওয়ার জন্য ওরা একটা টেস্ট-এর ব্যবস্থা করেছে। এই টেস্ট দিলে এখানে কাজ করতে সুবিধা। কী সুবিধা? সুবিধা দুটি-
  • কাজদাতা খেয়াল করে আপনি এই টেস্ট দিয়েছেন কিনা।
  • ওডেস্ক-এ প্রতি সপ্তাহে আপনি সর্বোচ্চ ২৫টি বিড করতে পারবেন। কিন্তু শুরুতেই তা পারবেন না। একাউন্ট ওপেন করার সাথে সাথে মাত্র ২টি বিড করার জন্য প্রতি সপ্তাহে সুযোগ পাবেন। রেডিনেস টেস্ট দিলে ১০টি হবে। কোনো কাজ পেলে ১৫টি হবে। কোনো কাজ শেষ হলে এবং ফিডব্যাক পেলে ২০টি হবে। আপনার এড্রেস ভেরিফাইড হলে ২৫টি হবে।
রেডিনেস টেস্ট দেয়া খুবই সহজ। হেল্প পেতে সজীব ভাইয়ের এই পোস্টটি পড়তে পারেন- ওডেস্ক এর বিভিন্ন স্কিল টেস্ট পাস করে আজই কাজ পেতে চেষ্টা করুন

অন্যান্য টেস্ট

ওডেস্ক-এ প্রায় পাঁচশ’ মতো টেস্ট রয়েছে বিভিন্ন কাজের জন্য। আপনি যে কাজ করবেন সে কাজের রিলেটেট টেস্ট দিয়ে যদি ভালো স্কোর পান তাহলে কাজ পেতে সুবিধা হয়।

কাজ পাওয়া কি খুব কঠিন?

মোটেও না। একেবারেই কঠিন না। আপনার চেষ্টা, আগ্রহ যদি থাকে এবং আপনি যদি সত্যিই কাজ জানেন তাহলে অবশ্যই কাজ পাবেন। এবং খুব দ্রুত পাবেন। এটা ঠিক, প্রথম কাজটার জন্য আপনাকে একটু পরিশ্রম বেশি-ই করতে হবে। তবে আপনি যদি একটানা ১০ দিন লেগে থাকতে পারেন তাহলে আপনার সাফল্য নিশ্চিত।

বিড করতে করতে হয়রান, কাজ পাচ্ছি না…

আমি বলবো, কথাটা মোটেও ঠিক না। আমি অনেককেই জানি, যারা মাত্র ২/৩ দিন বিড করেই তাদের প্রথম কাজটা পেয়ে গেছে। আপনি হয়রান হবেন না যদি আপনি সত্যিই কাজ করতে চান।
নিজের প্রোফাইলটা দেখুন- এবং নিজেকেই প্রশ্ন করুন- আপনি যদি কাজদাতা হতেন তাহলে আপনার কাজের জন্য এই প্রোফাইলটাকে মনোনীত করতেন কিনা? নিজের কাছে নিজে সৎ থেকে বুঝতে চেষ্টা করুন।

কাজ পাওয়ার কৌশল

বিড করে কাজ পাওয়ার নানা কৌশল আছে। এখানে আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। আশা করছি এগুলো আপনাদের কাজে লাগবে, যারা নতুন।

কৌশল-০১

নতুন কাজে বিড করুন। একটা নতুন জব পোস্ট হওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে বিড করতে পারলে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি- কাজদাতা সাধারণত তাকেই সিলেক্ট করে যে সবার আগে বিড করেছে। তবে ব্যতিক্রমও আছে।

কৌশল-০২

এমন কোনো কাজে বিড করবেন না যে কাজের জন্য কাজদাতা কাউকে ইন্টারভিউতে কল করেছে। কারণ সাধারণত কাউকে ইন্টারভিউতে কল করার অর্থ-ই হচ্ছে কাজটা তাকে দিয়ে দেওয়া। সাধারণত এটাই হয়।

কৌশল-০৩

সুন্দর, সিম্পল এবং শর্ট কভার লেটার লিখুন। কাজদাতার রিক্রয়ারমেন্টসগুলো ভালোভাবে পড়ুন। এবং রিপ্লাই করুন পয়েন্ট বাই পয়েন্ট। কেন আপনি এই কাজের উপযোগী, কেন আপনাকে হায়ার করবে সে কথা ক্লিয়ার করে লিখুন। আগে এরকম সাইট করেছেন, যদি স্যাম্পল থাকে তাহলে স্যাম্পল লিংক দিন কভার লেটারে। ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যম ব্যাবহার করবেন না।

কৌশল-০৪

১০০ ডলারের কাজের জন্য বিড করুন ৬০ ডলারের মধ্যে। কেন কম বিড করেছেন সেটা কাজদাতাকে কভার লেটারে লিখুন। বলুন- আপনি নতুন ওডেস্কে। আপনি অনেক কাজ জানেন এবং অভিজ্ঞ। কিন্তু যেহেতু নতুন তাই এই মুহূর্তে আপনার টাকার চেয়ে ভালো কিছু ফিডব্যাক দরকার। তাই কম টাকা বিড করেছেন। দেখবেন সহজেই ইন্টারভিউতে কল পাবেন। ইন্টারভিউতে কল পাওয়ার অর্থ কাজদাতা আপনার কাছে আরও কিছু জানতে চাচ্ছে। যা জানতে চাচ্ছে তা ক্লিয়ার জবাব দিন। বাড়তি কথা বলবেন না। নিজের কাছে নিজে সৎ থাকবেন। এবং বলবেন- আপনি পরিশ্রমী, অভিজ্ঞ এবং সৎ।

কৌশল-০৫

বাংলাদেশ টাইম সকাল ৪টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত সময়ে বিড করুন। আমি মনে করি এই সময়ে ওডেস্কে সবচেয়ে বেশি জব পোস্ট হয় এবং বিডকারীর সংখ্যা তুলনামূলক কম থাকে। এই সময়ে বিড করলে ইন্টারভিউতে দ্রুত কল পাওয়া যায়।

পোস্ট অনেক বড় হয়ে গেলো নাকি?

লেখাটা অনেক বড় হয়ে গেলো নাকি? আচ্ছা, তবে আর বড় করছি না। নিজের কিছু অভিজ্ঞতা এবং সাফল্যের(?) কথা উল্লেখ করে আজকের মতো শেষ করবো।

ওডেস্ক আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চলেছে…

আমার স্বপ্ন ছিলো- এমন কাজ দরকার যেখানে কেউ আমাকে নিয়ে টানা-হেচড়া করবে না। কারও কাছে জবাবদিহী করতে হবে না। কিন্তু মোটামুটি ভালো আয় হবে। আমার মনে হচ্ছে, আমার এই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে-
আমি ওডেস্কে প্রথম কাজ পাই ২৮ জুন ২০১১-এ। একটা ডোমেইন+হোস্টিং-এ ওয়ার্ডপ্রেস সেটাপ দিয়ে থিম প্রাইমারী কাস্টমাইজেশন। মাত্র ২০ ডলার ছিলো কাজটির মূল্য। কাজটি আমি ভালোভাবে করি এবং ভালো ফিডব্যাক (৫ থেকে ৫) পাই। পেমেন্ট পাই জুলাই মাসে। সেই কাজদাতা আরও দুটি কাজ পরবর্তীতে আমাকে দেয় এবং ঐ একই সময়ে অন্য একজনের কাছ থেকে আরও দুটি কাজ পাই ওয়ার্ডপ্রেসের প্রতিটি ১৮ ডলার করে। অর্থাৎ জুলাই মাসে আমি ওডেস্ক থেকে পাই ৭৬ ডলার।
আগস্ট মাসে আমার আয় হয় ১৫০ ডলার-এর মতো। সেপ্টেম্বর মাসে আমি টার্গেট করি ৩০০ ডলার। এবং আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে টার্গেট ওভার হয় এবং আমি আয় করি ৩৭৬ ডলার। চলতি অক্টোবর মাসে আমার টার্গেট ৫০০ ডলার। এই মাসের প্রথম তিন সপ্তাহে আমি ৪৮৩ ডলারের কাজ করেছি এবং এখন শেষ সপ্তাহ চলছে। আশা করছি অক্টোবর-এর শেষ সপ্তাহে আয় হবে প্রায় ২০০ ডলার। এবং আমার টার্গেট এই মাসেও ওভার হবে… :)
হাসান ভাইকে কথা দিয়েছিলাম ওডেস্কে আমার আয় সর্বমোট ১০০০ (এক হাজার) ডলার হলেই একটা পোস্ট দেবো এই ব্লগে। গত সপ্তাহে টার্গেট পূরণ হয়েছে তাই এই সপ্তাহে পোস্ট লিখলাম শত ব্যস্ততার মধ্যেই।

সর্বশেষ কথা

আসলে সর্বশেষ বলতে কোনো কথা নেই। আপনার আগ্রহ, চেষ্টা আপনাকে সাফল্য দেবেই। সুতরাং অপেক্ষায় না থেকে এখনই শুরু করুন। ওডেস্ক বিষয়ক যেকোনো প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন, হেল্প পাবেনই। আরও সাহায্য পেতে ফেসবুকের ওডেস্ক হেল্প গ্রুপে যোগ দিন। এখানে অনেকেই আছেন যারা মাসে হাজার ডলারের বেশি আয় করেন এবং আপনাকে সাহায্য করার জন্য অপেক্ষা করছেন।

কৃতজ্ঞতা

  • শ্রদ্ধেয় জিন্নাত উল হাসান ভাই >> যিনি বলতে গেলে হাতে ধরিয়ে আমাকে ওয়ার্ডপ্রেস শিখিয়েছেন। বর্তমানে আমি ওডেস্কে শুধু ওয়ার্ডপ্রেসের কাজ করছি। এবং ওয়ার্ডপ্রেসের উপর আমার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, সার্টিফিকেট নেই। সম্পূর্ণ-ই হাসান ভাইয়ের কাছ থেকে শেখা।
  • শ্রদ্ধেয় বিথী আপু >> আমার ওডেস্ক গুরু। যিনি আমাকে কথা দিয়েছিলেন ১ সপ্তাহের মধ্যে তোমাকে কাজ পাইয়ে দেবো। এবং তিনি তার কথা রেখেছিলেন। তাঁকে যে কত বিরক্ত করেছি তার কোনো ইয়ত্তা নেই। এবং এখনো করি… :)
  • প্রিয় তন্ময় ভাই >> তন্ময় ভাইয়ের ওডেস্ক প্রোফাইল দেখে আমি খুব ইন্সপায়ার্ড হই। এবং ফেসবুক থেকে জানতে পারি ওনার আয়ের খবর। যা আমাকে দারুন আন্দোলিত করে এবং এখন আমি ওনার প্রিত অনেক কৃতজ্ঞ। তিনিও আমাকে নানা সময় নানা হেল্প করেছেন।
  • প্রিয় ইউনুস ভাই >> ওয়ার্ডপ্রেসের নানা হেল্পের জন্য ওনাকে নানা সময় নানাভাবে বিরক্ত করেছি। কিন্তু আশ্চর্য, এই ভাইটাকে বিরক্তের চরম শিখরে নিতে পারছি না। সে চোখ বন্ধ করেই আমার নানা যন্ত্রণা সহ্য করে এবং হেল্প করে। তবে আমি আশা ছাড়িনি, বিরক্ত করেই যাচ্ছি- আশা, একদিন না একদিন তিনি বিরক্ত হবেন-ই… :P
  • প্রিয় আদনান ভাই >> আমি মাঝে মাঝে ভাবি, এই লোকটা আমার জন্য শুধু শুধু এতো পরিশ্রম কেন করে?
এবং আরও অনেকে… >> আমিনুল ভাই, এমএইচ মেহেদী ভাই, মামুন সৃজন ভাই, সজীব ভাই, কনিকসহ আরও অনেকের সহযোগিতা আমি পেয়েছি, পাচ্ছি।
আমি ভাগ্যবান, আমি সত্যি-ই ভাগ্যবান
Share on Google Plus

About Nerob Tuner

Yo, I'm Nerob Tuner. I am a freelance web designer based in Dhaka, Bangladesh. When not geeking out over design, I'm likely geeking out over film, technology or pretending to play the guitar.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment